‘পেটের ক্ষিধে ঠিকমতো মিটলে রাজনীতি সুন্দর হবে এবং পেটে ক্ষিধে রেখে সুন্দর রাজনীতির সংস্কৃতি নিয়ে আসা সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে তিনি পঞ্চগড় জেলা শহরের অদূরে জেলা প্রশাসন ইকো পার্কে মাশরুম ও মুক্তা চাষ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি।এ সময় তিনি বলেন, গতানুগতিক কৃষি করতে করতে কৃষকরা এখন ক্লান্ত। এখানে ঠিকমতো না আছে উপার্জন না আছে কোন নিশ্চয়তা।
তাই কৃষির পাশাপাশি আমাদের বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। এই এলাকার অনেক মানুষ আছে যারা জমি বিক্রি করে হলেও ১০ লাখ টাকা দিয়ে পিয়নের চাকরি নিতে করতে চাইবে। একদিকে এটা ঘুষ, দ্বিতীয় মেধার লড়াই থাকছে না। তৃতীয়ত এখান থেকে সৎ পথে কখনো স্বচ্ছল জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়।
আমরা যদি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মূল ধন নিয়ে কোন ব্যবসায় যাই তাহলে সাবলম্বী হয়ে উঠার সুযোগটা এখানে বেশি। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি অযৌক্তিকভাবে আমাদের সুবিধা বঞ্চিত করে দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার বিকল্প খুঁজে নিবে। বাংলাদেশ ভারত দুটি পাশাপাশি দেশ। কখনো এই দুটি দেশ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে আমরা এটি প্রত্যাশা করি না।
কিন্তু ভারতের কাজ ও তারা বাংলাদেশকে কিভাবে দেখছে এই জিনিসগুলোই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। কোন কিছু কখনো থেমে থাকে না। বিশ্বায়নের এই সময়ে সবকিছুরই বিকল্প রয়েছে। এভাবে কিন্তু পৃথিবীর পরাশক্তি অনেককে চেপে ধরার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে কিন্তু দিন শেষে ওই ছোট ছোট শক্তিগুলো বিকল্প অসংখ্য পথের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী হয়েছে। আমরা মনে করি শুধু ভারত নয় পৃথিবীর যেন কোন দেশই যদি তাদের জায়গা থেকে বাণিজ্যিক চুক্তি বা সুযোগ সুবিধার জায়গায় আমাদেরকে এভাবে চেপে ধরার চেষ্টা করে আমরা মনে করি পুরো বিশ্ব আমাদের জন্য খালি রয়েছে।
আমরা বিশ্বের অন্য জায়গা যেখানে সমতা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক রেখে আমরা সুন্দর একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়তে পারবো আমরা সেদিকে যাবো। আমরা বিশ্বাস করি ভারত রাজনৈতিক দল হিসেবে নয় একটা দেশ হিসেবে ফাংশন করবে এবং দেশ হিসেবে আরেক দেশের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি করবে এবং সেগুলো বজায় রাখবে।
শামসুজ্জামান দুদু যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে তিনি বলেন, দুদু ভাই যে মন্তব্য করেছেন তা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য দল হিসেবে বিএনপির নয়। তারা আমাদের রাজনীতির সিনিয়র তাদের দেখে আমরা শিখবো। কিন্তু তারা যদি তাদের অনুজদের সামনে রেখে প্রতিহিংসামূলক কথা বলার সংস্কৃতি আবার তৈরি করেন যেমনটি শেখ হাসিনা ড. ইউনুস ও খালেদা জিয়াকে ছোট করে কথা বলতেন যা রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেছিল আমরা একই সংস্কৃতি তাদের মাধ্যমে আর দেখতে চাই না। লেখাপড়ার পরিবেশ একেবারে শেষ হয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে তা ঠিক নয়। তবে কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন যারা কথা বলছেন এই মানুষগুলো আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন কিনা তার নিশ্চিয়তা ছিলো না। এই ছাত্রদের এতো ত্যাগ এতো রক্তের পরেই কিন্তু এই অভ্যুত্থান এবং এই মানুষগুলো এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারছে। আগামীতে যেই রাজনৈতিক দল নেতৃত্বে আসুক না কেন যে ছাত্ররা এই অভ্যত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের প্রতি এতোটুকু শ্রদ্ধা প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গের থাকা উচিত। বিএনপি বড় দল হিসেবে এই প্রত্যাশা আরো বেশি।
নববর্ষ নিয়ে সারজিস বলেন, শো অফের জন্য যেন বাইরের যে অপসাংস্কৃতিগুলো রয়েছে তা যেন আমরা এই একটা সংস্কৃতির অংশ না বানিয়ে না দেই। একজনের সংস্কৃতির অন্যজনের উপর চাপিয়ে দেয়ার কাজও যেন আমরা না করি। সবার সংস্কৃতির উপর আমাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। নববর্ষে আমাদের এলাকায় হালখাতা হতো, উৎসবের মতো আমেজ থাকতো। আমাদের এলাকায় ইলিশ এতো সহজলভ্য ছিলো না। আমি বাড়িতে পহেলা বৈশাখে ইলিশ খেয়েছি এমন হয় নি। তবে বাড়িতে পান্তা ভাত, সিঁদলের ভর্তা, পেলকা ও তিতারি শাক রান্না হতো।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হোসাইন ও প্রশিক্ষক ড. নজরুল ইসলামসহ প্রশিক্ষনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।